All Tips And Tutorials

Online-money exchanger list

চাকরি ইন্টারভিউ কৌশল: যে কোন চাকরির ইন্টারভিউতে পাস করার ১০ টি সহজ পদ্ধতি

চাকরি ইন্টারভিউ কৌশল: শীর্ষ ১০ পদ্ধতি, চাকরি ইন্টারভিউ, অনেক সময় "ভিভা" হিসেবে বর্ণিত হয়, অনেক সংদর্ভে, আত্মবিশ্বাসের অভাব করতে ...

সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭

ইন্টার ফেল করেও সুশান্ত পাল ৩০ তম বিসিএস পরিক্ষায় প্রথম হয়েছেন।

1 comments

পড়াশোনা করতে কখনোই ভালো লাগতো না; এর ফলও হাতেহাতে পাইসি। ম্যাট্রিকে গোল্ডেন এ+ পাইসিলাম। চিটাগাং কলেজে ভর্তি হলাম। সবাই ভালো স্টুডেন্ট হিসেবে জানতো। ইন্টারমেডিয়েটে পড়াশোনা অনেকটা ছেড়েই দেই। স্যারদের বাসায় যেতাম আর আসতাম, পড়াশোনা কিসু করতাম না, রাস্তায়-গলিতে আড্ডাবাজি করতাম, বাসায় ফিরতাম ১০টার পর। বাবা-মা'র কথা শুনতাম না, উল্টা ঝগড়া করতাম, বাসায় চিল্লাচিল্লি করতাম। মনে হতো, ওইটাই জীবন। ভাইয়া, চিটাগাং কলেজ থেকে কেউ ফেল করে না, ইন্টারমেডিয়েটে ফেল করা সত্যিই কঠিন। আর আমি সেটাই করসিলাম। সায়েন্সে পড়তাম, কিসুই পারি না, বানায়ে কী লিখবো, সাদা খাতা জমা দিসি ভাইয়া। নিজেকে এই প্রথমবারের মতো চিনতে পারলাম। দেখলাম, সবাই দূরদূর ছাইছাই করে, কেউ দুই পয়সারও পাত্তা দেয় না। খালি মা-বাবা কিছু বলতো না, শুধু কাঁদতো, শুধু কাঁদতো। অথচ, আমি আগে ভাবতাম, বাকিরা সবাই আমার আপন, মা- বাবা'কে শত্রুর মতো লাগতো। খুব কান্না পেতো ভাইয়া, আবার কাঁদতে লজ্জাও লাগতো। মাঝে মাঝে মনে হতো, মরে যাই।আবার মরে গেলে মা-বাবা আরো বেশি কাঁদবে, এটা ভেবে কষ্টও লাগতো। আবারমরে গেলে কী হবে, কী হবে না, এগুলা ভাবতাম, ভয়ও লাগতো। পাগলের মতোছিলাম কয়েক মাস। এরপর বাবা-মা বুঝালো, একবার ফেল করলে কিছু হয় না। আমি ভালোভাবে পড়লে পরেরবার অনেক ভালো করতে পারবো, পুরা লাইফটা তো পড়ে আছে, আমি চেষ্টা করলে অনেকদূর যেতে পারবো, ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাইয়া,হাসি পাচ্ছে না শুনতে? কিন্তু জানেন, ওইসময়ে কেউ আমাকে ভালো কিসু বলতো না, তাই একটু ভালো কিসু শুনলে মনটা অনেক বড়ো হয়ে যেতো, মনে হতো, আমিও পারবো! আমি পরেরবার পরীক্ষা দেই, খুব বাজে রেজাল্ট করি, কিন্তু পাস করি। ভাইয়া, জানেন, পরীক্ষার সময় স্যাররা এসে আমার সামনে দাঁড়ায়ে বলতো, এই পেজটা এক টানে কেটে দাও, পুরো পেজ তো ভিজায়ে ফেলসো। আমার খুব কষ্ট লাগতো,
পরীক্ষার সময়ও কাঁদতাম, চোখের পানিতে পেজ ভিজে যেতো। আমি কোনোদিন পরীক্ষায় ফেল করি নাই, ছোটবেলায়
সবসময় ফার্স্ট-সেকেন্ড হতাম। সেই আমি কিনা! যাই হোক, আমার বাজে রেজাল্ট দিয়ে ভালো কোথাও ভর্তি হওয়া তো দূরে থাক, পরীক্ষাও দিতে পারি নাই। বাবা বলসিলো, প্রাইভেটে ডাক্তারি পড়াবে। আমার বাবার বেশি টাকা ছিলো না, লোন নিবে ভাবতেসিলো। হঠাৎ আমার মনে হলো, অনেক কষ্ট দিসি বাবা-মা'কে, আর না। আমি অনেকটা জোর করেই কমার্স কলেজে ডিগ্রি পাস কোর্সে ভর্তি হলাম, বাবাকে অন্তত আমার জন্যে কারো কাছে হাত পাততে হবে না। আত্মীয়-স্বজন, পুরোনো বন্ধু-বান্ধব, পাড়ার লোকজন কেউই আমাকে গুনতো না, কেউ না, কেউ না! জাতীয়বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের কেউ পাত্তা দেয় না, ভাইয়া। আমিও একসময় দিতাম না, আর সেখানেই আমাকে পড়তে হইসে। নিজের উপর খুব রাগ হতো। ভাইয়া, ছোটোবেলায় ভালো স্টুডেন্ট হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে যাওয়াটা একটা বিশ্রী জিনিস, নিজেকে কিছুতেই আর ছোটো ভাবা যায় না। আগে সবাই ভালো ভালো বলতো, তখন আর কিছু বলে না। সবার উপরে কী যে রাগ হতো! মনে হতো, কেউই আমাকে দেখতে পারে না, সবাই আমার শত্রু। কেউই ভালো না বাসলে খুব খারাপ লাগে, ভাইয়া; শুধু খারাপ লাগতেই থাকে। কারোর সাথে খুব একটা কথা বলতাম না, কেউ কিসু বললে, কষ্ট পেতাম, কষ্ট চেপে রাখতাম, কিন্তু মুখে কিসু বলতাম না। মনে হতো, বলবেই তো, সব দোষ আমার। ভাইয়া, আমি ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড জেদি, মুখে কিসু না বললেও জেদ ঠিকই ছিলো। আপনি তো জানেন,
ডিগ্রি ৩ বছরের কোর্স; আমি থার্ড ইয়ারের মাঝামাঝি সময় থেকেই আইবিএ’র জন্যে পড়াশোনা শুরু করি। আমার মনে
হতো, আইবিএ’তে যারা পড়ে সবাই তো ওদেরকে ভালো স্টুডেন্ট ভাবে, ওখানে ভর্তি হয়ে যদি আমার ফেইলিউরগুলোকে একটু কম্পেন্সেট করা যায়। খুব ভালোভাবে প্রিপারেশন নিলাম। জীবনে এই প্রথম ডিসাইড করতে পারসিলাম, আমি আসলে কী চাই। ভাইয়া, আপনার একটা কথা আমার খুব প্রিয়। আপনার ফেসবুকে অ্যাবাউট মি’তে আপনি লিখছেন, It took me almost 2 decades to decide what I really want . When I'd
decided finally, it took me only 1 year to get what
I really want.

আপনি জানেন না, আপনার
অনেক কথাই আমার মুখস্ত, ভাইয়া। যা-ই
হোক,  আমি আইবিএ’তে পরীক্ষা দিলাম,
এবং টিকলাম ও। এখন সবাই ভাবে, আমি যে
ফেল করসিলাম, ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট
ছিলো, আমি আসলে অনেক
ক্যালিবারওয়ালা ছেলে। অথচ, ওরাই
একসময় বলতো, ও ফেল করবে নাতো, কে ফেল
করবে? সারাদিন টো টো করে, লেখাপড়া
নাই, আজেবাজে ছেলেদের সাথে মিশে,
আরো কতোকিসু। ভাইয়া, বিশ্বাস করেন,
ওরা যা যা বলতো, সব সত্যি ছিলো না।
কিন্তু আমি তো ফেল করসিলাম, তাই
ওদেরকে কিসু বলারও ছিলো না। আরো
বেশি কষ্ট লাগতো যখন দেখতাম, ওরা ওই
কথাগুলো আমার মা-বাবা’কেও শোনাতো।
এখন ভাবি, মা-বাবা’কে কতো কষ্ট দিসি!
এখন আর কেউ কিসু বলে না আমার মা-
বাবা’কে। এটাই আমার কাছে সবচে’
বড়োকিছু, আইবিএ’তে পড়া একটা
উছিলামাত্র। ভাইয়া, আমি বিশ্বাস করি,
যদি কেউ আল্লাহর কাছে মন থেকে হালাল
কিছু চায়, আর সেটা পাওয়ার জন্যে
ঠিকভাবে পরিশ্রম করে, আল্লাহ কখনোই
তাকে নিরাশ করেন না। ভাইয়া, আপনাকে
এগুলা বলতে লজ্জা লাগতেসে, কিন্তু কেনো
জানি মনে হলো, বলি। আপনার সম্পর্কে
আমি কিসু কিসু জানি, আপনি নিজেও
অনেক বাজে অবস্থা থেকে আজকের
অবস্থানে উঠে আসছেন। আপনি লিখসিলেন,
“পৃথিবীতে নোবডি হয়ে থাকাটা সুখের
নয়৷ যে যা-ই বলুক, এটা নিশ্চিত, নোবডি-
দের জন্যে এই পৃথিবীতে শুধু নাথিং-ই
বরাদ্দ থাকে৷ জীবন আমাদের কোথায়
নিয়ে যায়, আমরা কখনো তা ভাবতেই
পারি না৷” এটা খুব বেশি সত্যি, ভাইয়া।
অনেক বকবক করলাম, কিছু মনে নিয়েন না।
ডিগ্রি পাস করে তো বিসিএস দেয়া যায়
না, দেয়া গেলে চেষ্টা করে দেখতাম।
আমি মাস্টার্স শেষ করেই বিসিএস
পরীক্ষা দিবো, একটু হেল্প কইরেন, ভাইয়া।


1 টি মন্তব্য: