All Tips And Tutorials

Online-money exchanger list

চাকরি ইন্টারভিউ কৌশল: যে কোন চাকরির ইন্টারভিউতে পাস করার ১০ টি সহজ পদ্ধতি

চাকরি ইন্টারভিউ কৌশল: শীর্ষ ১০ পদ্ধতি, চাকরি ইন্টারভিউ, অনেক সময় "ভিভা" হিসেবে বর্ণিত হয়, অনেক সংদর্ভে, আত্মবিশ্বাসের অভাব করতে ...

সোমবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৮

ণ-ত্ব বিধান ও ষ-ত্ব বিধান ব্যাবহারের নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা

0 comments

ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধান হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি বিশেষ নিয়ম। বাংলা ভাষার তৎসম শব্দে দন্ত্য-ন এর মূর্ধন্য-ণ তে পরিবর্তনের নিয়মসমূহকে ণত্ব বিধান এবং দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ তে পরিবর্তনের নিয়মসমূহকে ষত্ব বিধান বলা হয়।

ণত্ব বিধান
বাংলা ভাষায় সাধারণত মূর্ধ-ণ ব্যবহারের
প্রয়োজন নেই। সেজন্য বাংলা (দেশি), তদ্ভব,
বিদেশি, বানানে মূর্ধণ্য বর্ণ (ণ) লেখার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাংলায় বহু তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে মূর্ধণ্য-ণ এবং দন্ত্য-ন এর ব্যবহার আছে এবং তা বাংলায় অবিকৃতভাবে রক্ষিত হয়। তৎসম শব্দের বানানে ণ এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণত্ব বিধান।

মুর্ধণ্য-ণ ব্যবহারের নিয়ম
১. ঋ, র(্র), ষ(ক্ষ) বর্ণের পরে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়।
যেমন: ঋণ, বর্ণ, বিষ্ণু, বরণ, ঘৃণা।
২. যদি ঋ, র(্র), ষ(ক্ষ) বর্ণের পরে স্বরবর্ণ , ক-বর্গ, প-বর্গ, ষ, ব, হ,য় অথবা অনুস্বার (ং) থাকে, তার পরবর্তী দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়ে যায়।
যেমন: কৃপণ, নির্বাণ, গ্রহণ।
৩. ট-বর্গের পূর্বের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়।
যেমন: বণ্টন, লুণ্ঠন, খণ্ড।
৪. প্র, পরা, পরি, নির্- উপসর্গের এবং 'অন্তর'
শব্দের পরে নদ্, নম্, নশ্, নহ্, নী, নুদ্, অন্, হন্- কয়েকটি ধাতুর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য- ণ হয়।
যেমন: প্রণাম, পরিণাম, প্রণাশ, পরিণতি, নির্ণয়
ইত্যাদি।
৫. প্র, পরা প্রভৃতির পর 'নি' উপসর্গের দন্ত্য-ন
মূর্ধন্য-ণ হয়।
যেমন: প্রণিপাত, প্রণিধান ইত্যাদি।
৬. কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ হয়।
যেমন: চাণিক্য, মাণিক্য, কণা, গৌণ, নিপুণ, বাণিজ্য, লবণ, পণ্য, পুণ্য, বণিক, মণ, শোণিত, বিপণী, পণ, বীণা, বাণ, লাবণ্য, কণিকা, মণি, শাণ প্রভৃতি।

কোথায় কোথায় ণত্ব বিধান
নিষেধ বা খাটে না
১. ত-বর্গযুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না।
যেমন: বৃন্ত, বৃন্দ, গ্রন্থ।
২. বাংলা ক্রিয়াপদের অন্তঃস্থিত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ
হয় না।
যেমন: ধরেন , মারেন, করেন, যাবেন, খাবেন, হবেন, নিবেন, দিবেন।
৩. বিদেশী শব্দের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না।
যেমন: কোরআন, জার্মান, জবান, নিশান, ফরমান, রিপন।
৪. পূর্বপদে ঋ, র, ষ থাকলে পরপদে দন্ত্য-ন।মূর্ধন্য-ণ হয় না।
যেমন: মৃগনাভি, দুর্নাম, ত্রিনেত্র, মৃন্ময়।
৫. পদের শেষের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না।
যেমন: কর্মন্, ব্রাহ্মন।

ষত্ব বিধান
যেসব তৎসম শব্দে ‘ষ’ রয়েছে তা বাংলায়
অবিকৃত আছে। তৎসম শব্দের বানানে ষ এর
সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ষত্ব বিধান।

মুর্ধণ্য-ষ ব্যবহারের নিয়ম
১. ঋ-কারে পরে মূর্ধন্য-ষ হয়।
যেমন: ঋষি, বৃষ, বৃষ্টি।
২. অ, আ, বাদে অন্য স্বরবর্ণ, ক এবং র বর্ণের পরের প্রত্যয়াদির দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয়।
যেমন: ভবিষ্যৎ, পরিষ্কার, মুমূর্ষ।
৩. 'অতি', 'অভি' এমন শব্দের শেষে ই-কার উপসর্গ এবং 'অনু' আর 'সু' উপসর্গের পরে কতগুলো ধাতুর দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয়।
যেমন: অতিষ্ঠ, অনুষ্ঠান, নিষেধ, অভিষেক, বিষণ্ন('ণ্ন' মূর্ধ-ণ পরে দন্ত্য-ন), সুষম।
৪. নিঃ, দুঃ, বহিঃ, আবিঃ, চতুঃ, প্রাদুঃ এ শব্দগুলোর পর ক্, খ্, প্, ফ্ থাকলে বিসর্গ (ঃ) এর জায়গায় মূর্ধন্য-ষ হয়।
যেমন: নিঃ + কাম > নিষ্কাম, দুঃ +
কর > দুষ্কর, বহিঃ + কার > বহিষ্কার, নিঃ + পাপ>
নিষ্পাপ।
৫. কিছু শব্দ স্বভাবতই মূর্ধন্য-ষ হয়।
যেমন:আষাঢ়, নিষ্কর, পাষাণ, ষোড়শ ইত্যাদি।
৬. কতগুলো শব্দ বিশেষ নিয়মে মূর্ধন্য-ষ হয়।
যেমন: সুষুপ্তি, বিষম, বিষয়, দুর্বিষহ, যুধিষ্ঠির
ইত্যাদি।

কোথায় কোথায় ষত্ব বিধান
নিষেধ বা খাটে না
১. সাৎ প্রত্যয়ের দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয় না।
যেমন: ভূমিসাৎ, ধূলিসাৎ, আকস্মাৎ।
২. খাঁটি বাংলা ও বিদেশী শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয় না।
যেমন: টেক্স, পুলিশ, জিনিস, মিসর, গ্রিস, স্টেশন, মুসাবিদা।
৩. অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্
সন্ধিযুক্ত হলে বিসর্গ (ঃ) এর জায়গায় দন্ত্য-স হয়।
যেমন: পুরঃ + কার = পুরস্কার, ভাঃ + কর =  ভাস্কর, তিরঃ + কার = তিরস্কার, পরঃ+ পর= পরস্পর, স্বতঃ + ফূর্ত= স্বতঃস্ফূর্ত।
৪.  অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ ছাড়াও ত থাকলেও স হতে পারে [ তথ্যসূত্র প্রয়োজন ],
যেমন: মনঃ+ তাপ = মনস্তাপ, শিরঃ + ত্রাণ=
শিরস্ত্রাণ

ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধান-এর
প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ভাষার যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে
নেওয়া হয়েছে সে সব শব্দে সংস্কৃত ভাষার
বানানরীতি অবিকৃত রাখা হয়েছে। সংস্কৃত ভাষার
বানান ও উচ্চারণ রীতি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিতেরা কোনো শব্দের উচ্চারণকে অনায়াস করার জন্য একটি শব্দে পরপর দুইটি ধ্বনিকে কাছাকাছি উচ্চারণস্থলের রাখার চেষ্টা করেছেন।
মূর্ধন্য-ণ এবং দন্ত্য-ন-এর উচ্চারণ আপাতশ্রবণে
কাছাকাছি মনে হলেও মূর্ধন্য-ণ উচ্চারণ করতে
হয় মূর্ধা থেকে আর দন্ত্য-ন উচ্চারণ করতে
হয় দন্ত থেকে। তাই, যে সব ধ্বনি উচ্চারণ
করতে জিহবার অগ্রভাগ দাঁতকে স্পর্শ করে
অর্থাৎ 'ত'-বর্গীয় ধ্বনিগুলো (যেমন ত, থ, দ, ধ) উচ্চারণ করার সময় কাছাকাছি আরেকটি ধ্বনি মূর্ধা থেকে উচ্চারণ না করে দন্ত থেকে উচ্চারণ
করা সহজসাধ্য। সে কারণে সাধারণ ভাবে 'ত'-
বর্গীয় ধ্বনির সাথে যুক্ত ধ্বনি দন্ত্য-ন হয়।
একই নিয়ম অনুসারে, যেসব ধ্বনি উচ্চারণ করতে জিহবার অগ্রভাগ মূর্ধাকে স্পর্শ করে অর্থাৎ 'ট'-বর্গীয় ধ্বনিগুলো (যেমন ট, ঠ, ড, ঢ)-এর সাথে যুক্ত ধ্বনি মূর্ধন্য-ণ হয়।
ঋ, র, ষ উচ্চারণ করতে হয় মূর্ধা থেকে আর তাই এই ধ্বনিগুলোর সাথে যুক্ত ধ্বনি হয় মূর্ধন্য-ণ। এখানে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ্য যে, "বণ্টন, লুণ্ঠন"-এই শব্দগুলোর প্রথম মূর্ধন্য-ণ টি 'ট'-বর্গীয় ধ্বনির সাথে যুক্ত হয়ে উচ্চারিত হচ্ছে, তাই এখানে ণত্ব বিধান ব্যবহৃত হবে, কিন্তু পরের দন্ত্য-ন এর আগে বিরতি থাকায় মূর্ধন্য-ণ হচ্ছে না। ষত্ব বিধান-এর জন্যও একই রকম নিয়ম প্রযোজ্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন