তৎসম শব্দ কী...?
সংস্কৃত ভাষার যে-সব শব্দ পরিবর্তিত না হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসম শব্দ। উদাহরণ - চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য।
নিচের অনুচ্ছেদটি কয়েকবার পড়ে মুখস্ত করে ফেলুন। তাহলে আর ৩০-৩৫ টা তৎসম শব্দ কষ্ট করে মুখস্ত করতে হবে না।
অনুচ্ছেদটির লাল শব্দ গুলো হলো তৎসম শব্দ
আমি থাকিতাম ভবনের পঞ্চম তলায়। সেদিন রাতে জানালা খুলিয়া দিতেই চন্দ্রলোক হইতে জ্যোৎস্না আসিয়া আমার গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিল। সাগর হইতে নির্মল বায়ুর ঝাপটা আসিয়া মনকে পুলকিত করিল। এই নির্মল বায়ুর কোমল আঘাতে অন্তরে কাব্যক্ষুধা উপস্থিত হইলেও কবিতায় জীবনের জল–ছবি আঁকার ক্ষমতা আমার নেই, কেননা আমি কবি নই। আমি বিভিন্ন সময়ে কবিতা লিখিবার চেষ্টা করিয়াছিলাম। কিন্তু তাহার ভাষা ছিল এতটাই উল্টাপাল্টা যে উহা পাঠকের সম্মুখে এক জগাখিচুড়িরূপে উপস্থিত হইয়াছিল এবং সেই অখাদ্য আহার করিয়া যে পাঠকের উদর পূর্তি হই নাই – তাহা বলাই বাহুল্য। এমনকি একজন পাঠক আসিয়া আমাকে শাসাইয়া দিয়াছিলেন যে এই সব এক্ষুনি বন্ধ কর, নচেৎ এই চন্দন কাষ্ঠ দিয়া তোমার চৌদ্দ গুষ্ঠির শ্রাদ্ধ করিব এবং কাশীতে গিয়া তোমার নামে পিণ্ড দান করিব। এই কুৎসিত অভিজ্ঞতার ফল স্বরূপ আমার কাব্যচর্চার সেইখানেই পরিসমাপ্তি ঘটিল। আসলে চাষির কর্ম কৃষি করা, ঋষির কর্ম তাহাকে দিয়া হইবার নহে।
হঠাৎ নক্ষত্র খচিত অগ্রাহায়নের আকাশের পানে চাহিয়া আমার মাতার কথা মনে পড়িল। তিনি ছিলেন একজন সাদাসিধে গৃহিণী এবং আমি ছিলাম তাহার ধর্ম–পুত্র। তিনি বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা লইয়াছিলেন এবং তাহার চরণে আমাকে আশ্রয় দিয়াছিলেন। ক্রমেই আমি তাহার প্রিয় পাত্র হইয়া উঠিয়াছিলাম। কিন্তু মনুষ্য জীবনের ব্যাকরণই হইতাছে এই যে তাহা নদীর মত ক্ষণে ক্ষণে বাঁক নিয়া প্রবাহিত হয়।
আমার মাতা গত হইয়াছেন আজ প্রায় দশ বৎসর হইতে চলিল, কিন্তু মধ্য গগণের প্রদীপ্ত সূর্যের মতই তিনি আজো আমার মনের আকাশে জাজ্বল্যমান।